This News Published on Daily Prothom Alo 27th December 2017
কোনোমতে ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচার জন্য এর-ওর কাছে হাত পাতছেন ইমাম হোসেন (৩৪)। বেঁচে থাকতে অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু এক মাস আগেও অবস্থা এমন ছিল না তাঁর। হয়তো স্ত্রী-সন্তানের বড় আবদার মেটাতে পারতেন না, কিন্তু পেট পুরে খেতে পারতেন তিন বেলা। একটি দুর্ঘটনা তাঁকে গাড়ি থেকে রিকশায় নামিয়েছে। আর আরেকটি ‘নির্মম’ ঘটনা তাঁকে নামিয়েছে পথে।
সাহায্য করতে চাইলে
বিকাশ নম্বর ০১৯৬১৩৪৯২৪৮।
Source
কোনোমতে ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচার জন্য এর-ওর কাছে হাত পাতছেন ইমাম হোসেন (৩৪)। বেঁচে থাকতে অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু এক মাস আগেও অবস্থা এমন ছিল না তাঁর। হয়তো স্ত্রী-সন্তানের বড় আবদার মেটাতে পারতেন না, কিন্তু পেট পুরে খেতে পারতেন তিন বেলা। একটি দুর্ঘটনা তাঁকে গাড়ি থেকে রিকশায় নামিয়েছে। আর আরেকটি ‘নির্মম’ ঘটনা তাঁকে নামিয়েছে পথে।
ইমাম হোসেনের গ্রামের বাড়ি যশোরের অভয়নগর। এখন থাকেন
রাজারবাগের বাগপাড়ায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। বাবা ছিলেন লাকড়ি
বিক্রেতা। অর্থাভাবে নবম শ্রেণির বেশি পড়া হয়নি তাঁর। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে
গাড়িচালনা শেখেন তিনি। কাজের সন্ধানে যশোর থেকে ঢাকায় আসেন ২০০২ সালে।
চাকরি নেন একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের কাভার্ড ভ্যানের চালক হিসেবে।
বেতন ছিল সাড়ে নয় হাজার টাকা। ২০০৭ সালে ভ্যান চালাতে গিয়ে তিনি দুর্ঘটনার
শিকার হন। দুর্ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও ডান হাত হারান। কোমরের দুপাশে
লাগাতে হয় রড। এমন শরীর নিয়ে কাটে চার বছর। চার বছর পর আবার কাজের জন্য যান
ওই কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে। এবার ইমাম হোসেন পার্সেল নথিভুক্ত করার
কাজ পান। বেতন সাড়ে ছয় হাজার। এই টাকায় সংসার চলত না বলে তিনি চাকরি ছেড়ে
ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো শুরু করেন।
ইমাম হোসেন বলেন, ‘রিকশার মালিককে প্রতিদিন ৩০০ টাকা দিতে
হতো। এরপর যা থাকত, তা দিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ সংসার চালাতে খুব কষ্ট
হতো। কিন্তু নিজের রিকশা কেনার সামর্থ্য নাই। তাই ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের
(ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম সাহেবের কাছে সাহায্য চাই। তিনি
নতুন একটি রিকশা কিনে দেন। কিন্তু প্যাডেল মেরে রিকশা চালাতে পারি না।
রিকশায় মোটর লাগানোর জন্য ধানমন্ডির বাসিন্দা আসিফ হোসেন সাহেবের কাছে
সাহায্য চাই। তিনি ২৪ হাজার টাকা দেন। পরে মায়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আর
ঋণ করি ৫ হাজার টাকা। গত নভেম্বরের শুরুতে চেয়ারম্যান সাহেবের দেওয়া রিকশা
ব্যাটারিচালিত রিকশায় রূপান্তর করি। কিন্তু এই রিকশা আমি দুই সপ্তাহও
চালাতে পারি নাই।’
ইমাম হোসেন জানান, গত ২৪ নভেম্বর রাত আনুমানিক দুইটার দিকে
নয়াপল্টনের জোনাকি সিনেমা হলের পাশে রিকশা নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা
করছিলেন। এ সময় একজন এসে বলেন, তিনি কাপ্তান বাজারে যাবেন ও আসবেন। তিনি ওই
যাত্রীকে রিকশায় তুলে চলতে শুরু করেন। রিকশা গুলিস্তানের আহাদ পুলিশ
বক্সের কাছে এলে ওই যাত্রী তাঁর নাকে কিছু একটা ধরে। এতে ঝাপসা দেখা শুরু
করেন তিনি। একপর্যায়ে ওই যাত্রী ও যাত্রীর এক সহযোগী তাঁকে মারধর করে তাঁর
নতুন রিকশা, মুঠোফোন ও ৬৮০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। অচেতন হয়ে ফুটপাতে পড়ে থাকেন
তিনি। পরদিন সকালে তাঁর পরিচিত এক রিকশাচালক তাঁকে দেখে ফুটপাত থেকে তুলে
বাসায় দিয়ে আসেন। তিন দিন পর তিনি সুস্থ হন।
ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার একটা
হাত নাই। অন্যের দানের টাকায় রিকশা কিনেছিলাম। সেই রিকশা কেউ এমন করে নিয়ে
যাবে চিন্তাও করতে পারি নাই।’
সুস্থ হয়েই ইমাম হোসেন যান পুলিশের কাছে। পুলিশ সব শুনেছে
কিন্তু রিকশা উদ্ধার হয়নি। ইমাম হোসেন বলেন, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে
একটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা আছে। পুলিশকে ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের জন্য
অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, নভেম্বর মাসের কোনো ফুটেজ পাওয়া
যায়নি। সন্দেহভাজন একজনকে ধরে পুলিশের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। পুলিশ
জানিয়েছে, ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া
যায়নি।
এখন কেন ভাড়ায় রিকশা চালাচ্ছেন না জানতে চাইলে ইমাম হোসেন
বলেন, ‘রিকশা আমার চালানোর উপযোগী করতে একটু রূপান্তর করতে হয়। মালিকেরা
এতে রাজি হন না। তাই কেউ ভাড়া দিচ্ছেন না।’ তবে এখন কীভাবে দিন চলে? ইমাম
হোসেন বলেন, ‘কোনো রোজগার নাই। বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। যে যা
সাহায্য দেন তাতেই খেয়ে না-খেয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।’ হাত হারানো ইমাম
হোসেনের প্রশ্ন রিকশাটা কি উদ্ধার হবে?
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার আরিফুল
ইসলাম বলেন, ‘রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি খুবই অমানবিক। এ ঘটনায় ইমাম হোসেন
বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমরা রিকশাটি উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’সাহায্য করতে চাইলে
বিকাশ নম্বর ০১৯৬১৩৪৯২৪৮।
Source
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন